গণপিটুনি থামাতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগ দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক বিশেষ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে জানান, “আমার শাসনামলে কোনো গণপিটুনি ছিল না। আমি সবসময় ভালোবাসা দিয়ে সমস্যার সমাধান করেছি। অন্যদিকে ড. ইউনূস দেশে গণপিটুনির সংস্কৃতি চালু করেছে।”
বিবৃতিতে হাসিনা বলেন, “স্বজন হারানোর বেদনা আমি জানি। তাই গণপিটুনির পরিবর্তে আমি বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য গণচুমা পদ্ধতি চালু করেছিলাম। আমার আমলের ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৮০০ মানুষকে গণচুমু দিয়ে পরকালে পাঠানো হয়েছে। যা অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের একটি রেকর্ড। স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি জনগণকে বিভ্রান্ত করতে গণচুমাকে বিকৃত করে ‘গণপিটুনি’ বলে প্রচার করেছে। তারা জানে না গণচুমা আর গণপিটুনি এক নয়— চুমায় গভীর মমতা আর ভালোবাসা থাকে, পিটুনিতে থাকে কেবল নৃশংসতা।”
শেখ হাসিনা আরও জানান, “২০১৮ সালের পর ২০১৯ সালে ৬৫ জন, ২০২০ সালে ৩৫ জন এবং ২০২১ সালে মাত্র ২৮ জনকে গণচুমা দিয়ে পরকালে পাঠানো হয়েছে। তালিকার বাইরে আছে আরও অনেকে। আমার নেতৃত্বে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে গণচুমা ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১৯ সালে রেনু হত্যার পর থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত গণচুমা পান করে চিরবিদায় নিয়েছেন কমপক্ষে ২২৪ জন। ২০২৪ সালে জাতির পিতার জন্মদিনে সোনারগাঁওয়ে ৪ জনকে গণচুমা দিলে তারা তীব্র আনন্দে মারা যান।”
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আমার আমলে কৃতিত্বের সাথে গণচুমা দিয়ে পরকালে পাঠানোর সংখ্যা দেড় হাজারের কাছাকাছি হলেও শুধু অল্প ক’টা গণচুমার ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। যেমন ২০১১ সালের ১৭ জুলাই আমিনবাজারে সাত বন্ধুকে গণচুমায় বিদায় দেওয়া হয়। অথচ পরের দিন মিডিয়া লিখল ‘ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা’। ২০১৯ সালে বাড্ডায় ছেলে ধরা সন্দেহে রেণু নামে এক নারীকে গণচুমা দিলে আনন্দে সে মারা যায়। একই বছর পটুয়াখালীতে গণচুমায় দাদন মিয়া নামে একজন মারা যান। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটে শহীদুন্নবীকে গণচুমা আর চেতনার আগুনে পুড়িয়ে পরকালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, ২০২২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জে গণচুমায় দিশেহারা আবু সুফিয়ান চির বিদায় নেন। এই সমস্ত চির বিদায়ের পেছনে ছিল আমার অনুসারীদের গভীর ভালোবাসা, কিন্তু মিডিয়া এই ভালোবাসাকে গণপিটুনির নামে বিকৃত করেছে। এমন অপবাদ আমি মেনে নিতে পারি না। তাই আমিন বাজারের ঘটনার বিচার দীর্ঘায়িত করে দশ বছরে শেষ করেছি। বাকীগুলির বিচার শেষই করতে দেই নাই। গণচুমার আবার বিচার কি!
“আমার অনুসারীরা খুব চঞ্চল” উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা কাউকে অপছন্দ করলে তাকে সংঘবদ্ধ চুমা দিত। চুমার ভালবাসা সইতে না পেরে অনেকেই পরকালে পাড়ি দিতেন। সংঘবদ্ধ চুমাকে গণচুমুর সাথে মিশান চলবে না। তাহলে চুমু খেয়ে পরকালে পাঠানো মানুষের সংখ্যা কয়েক হাজার হবে। এছাড়া গণচুমার শিল্পীরা প্রশিক্ষিত ছিল না। আমি সংঘবদ্ধ চুমুবাজদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। যাতে তারা তীব্র ভালোবাসায় একবার আলতো চুমু দিলেই সুতীব্র আনন্দে মানুষ চিরতরে বিদায় দিতে পারে। এই চুমা ছিল আমাদের সুশাসনের মূল স্তম্ভ।”
বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ভয়ের সংস্কৃতির পরিবর্তে ভালবাসার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমার শাসনামলের প্রতিটি গণচুমার পেছনে ছিল গভীর মমতা। কোনো ধাক্কাধাক্কি নয়, তাড়াহুড়ো নয়, শুধু চুমু দিয়েই ডাইরেক্ট পরকাল। ইউনূস ক্ষমতা নিয়ে এসব গণচুমাকে বলে গণহত্যা! এই স্পর্ধা তাকে দেয় কে!
শেখ হাসিনা বলেন, “আমার পালানোর প্রতি সংহতি জানিয়ে অনেক পুলিশ সদস্য পালিয়ে গেছে। তারা আমার মতোই আর ফিরে আসেনি। এদিকে আর্মি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেয়েছে মাত্র দুই দিন হলো। আর সুদখোর ইউনূস আমার দেড় দশকের ‘সংস্কৃতি গণচুমা’কে গণহত্যা’ বলে দিলেন! আমি দেড় দশকে একটি মামলা ছাড়া কিছুই শেষ করতে পারিনি, আর উনি ৪০ দিনে সবগুলি মামলা শেষ করতে পারলেন না! এমন পারফরম্যান্সের পরও উনি পদত্যাগ করছেন না, এটা তো জাতীয় লজ্জা।”
শেখ হাসিনা সতর্ক করে বলেন, “গণপিটুনির দায় নিয়ে ড. ইউনূসকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে, নইলে আমি “চট” করে বাংলাদেশে ফিরব না। তিনি পদত্যাগ করলে দেশকে আবার গণচুমার রোল মডেলে পরিণত করব।”
এদিকে, শেখ হাসিনার এই দাবির পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গণচুমার প্রতি সমর্থন জানিয়ে শোভাযাত্রার ঢল নেমেছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে ‘গণচুমা চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র’ স্থাপনের প্রস্তাব উঠেছে। জনতা ‘চুমাতেই মুক্তি, চুমাতেই শক্তি, চুমাতেই ভক্তি’ এবং ‘তুমি কে আমি কে, চুমাবাজ চুমাবাজ’ স্লোগানে মুখরিত করেছে ঢাকার রাজপথ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট হাসিনার বিবৃতিতে সমর্থন জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে। এই সময় ভাবগম্ভীর সুরে ‘আমার পাছা মোটা করে দাও হে তোমার জুতার সোলের তলে’ গানটি বাজছিল বলে জানা যায়।
ড. জাফর ইকবাল এবং কবি নির্মলেন্দু গুণ ‘গণচুমা মন্ত্রণালয়’ খোলার দাবি জানিয়েছেন। এই মন্ত্রণালয়ের কাজ হবে গণচুমা ও সংঘবদ্ধ চুমাসহ মমতাময়ী শেখ হাসিনা যেসব চুমা পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন তার ধরন, গভীরতা, গতি এবং প্রভাব নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাস স্থাপন করে গণচুমা সংস্কৃতির প্রসারে দায়িত্ব পালন করা বলে জানান ড. জাফর ইকবাল।